Thursday, April 4, 2013

আমার হল না


আমার হল না

রাস্তার মাথায় দাড় করিয়ে দিয়ে এক মধ্যরাতে আপনি বলেছিলেন
কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা চলে যেতে বরাবর – রাস্তার শেষে মুক্তি।

কিছু সুললিত মন্ত্রে পাঠ দিয়ে এক ভোরে আপনি বলেছিলেন
আর কোনো বাক্য নয় জপ মন্ত্র তপ তন্ত্র – মন্ত্রেই হবে শুদ্ধি।

মোড়কে বাঁধানো পুস্তক হাতে তুলে দিয়ে এক সকালে আপনি বলেছিলেন
কোনো অক্ষর কোনো ব্যাকরণ আর প্রয়োজন নেই – এতেই রয়েছে সমাধান।

আমার কম্পমান শরীর সবলে জাপটে ধরে এক দুপুরে আপনি বলেছিলেন
তোমাকে দিলাম বিশ্বাস, আর কোনো প্রশ্ন নয় – এই সেই মহাজ্ঞান।

আমি সেই রাস্তা ধরে অন্ধ ভিক্ষুকের মত দেয়ালে প্রাচীরে
আমি সেই মন্ত্র মুখে নিয়ে অহোরাত্রি লোক লোকান্তরে
আমি সেই দুর্বোধ্য পৃষ্ঠাবলীর পায়ে পায়ে মাথা খুড়ে
আমি সেই প্রশ্নহীন বিশ্বাস খড়কুটোর মত আগলে ধরে

ভেঙ্গেচুরে এক জীবন পথের খ্যাপা ধুলো
“বলো নাম বলো নাম” দাঁড়ের ময়না পাখি
গ্রন্থের পাতায় পাতায় ইতস্তত উইপোকা
প্রশ্নহীন অপেক্ষায় অনন্ত বিশ্বাসী যক্ষ

সব জীবনই কাটানো হল একে একে কথামত আপনার

মানুষ শুধু হয়ে ওঠা হল না আমার।

(এপ্রিল ০৪, ২০১৩)

Wednesday, March 27, 2013

আপত্তি নেই


আপত্তি নেই

সবকিছুতেই খুশি আমি
নইতো নিরাসক্ত
যা চাও তাই দিতেই পারো
বনবো তোমার ভক্ত।

আপত্তি নেই খাওয়াও যদি
ভাতের সাথে সুক্তো
আরো ভালো মাখাও যদি
তাতে খানিক রক্ত।

মন্দ নাকো হাজত থেকে
রাখো যদি মুক্ত
ভাবনা নেই হয়েই যাবো
তোমার দলভুক্ত।

কাজের শেষে দিতে পারো
সোনা-দানা মুক্তো
আরো কিছু ব্যালান্স না হয়
ব্যাংকে কোরো যুক্ত।

সবচেয়ে ভালো কি দিলে হয়
বলা বড় শক্ত
না হয় দিও মন্ত্রিত্বের
আসন খানা পোক্ত।

(১৯৮৬/৮৭ তে লেখা। দেশে তখন স্বৈরাচারী এরশাদের ডাকাতিয়া বাঁশির টান। মোহন বাঁশি কালাচাঁদের, ঘরে থাকা দায়। লাজ-লজ্জা আসন-বসন ছেড়ে নমস্য গুরুজনেরা নেমে গেলেন বোধির পথে, আমরা পৃথিবীর পাঠশালার তালেব-এলেমরা মুখ হা করে চেয়ে রইলাম।)

নির্বাচন ১৯৮৬


নির্বাচন ১৯৮৬

বাংলাদেশটা হয়ে গেছে
কেমন যেন উটের মতন
যখন তখন ঘাড়ের উপর
লাফিয়ে পড়ে নির্বাচন,
চাই বা না চাই কি আসে যায়
যেমন তাদের খুশি তেমন
দাড়িয়ে গেলেও দাড়াতে পারো
মিলতে পারে মানিক রতন।

দেশটা এখন বিরাট মিছিল
মিরপুর হয়ে মাহুতটুলি
খবর শুনি সেই মিছিলে
ঝাকে ঝাকে চলছে গুলি,
প্রতিদিনই মাটির পরে
লুটিয়ে পড়ে মাথার খুলি
একটুও ভাই মুখ খুলোনা
শক্ত করে বাঁধো ঠুলি।

ঢাকা শহর বনে গেছে
স্বৈরাচারের মক্কা
বন্দুকবাজ মাঠে নেমে
সবাইকে দেয় টেক্কা,
জ্যান্ত মানুষ তুলে নিয়ে
হাকায় কেবল ছক্কা
চোখটা স্রেফ বুজেই রাখো
দেখবে সবই ফাক্কা।

চারিদিকেই দাড়িয়ে গেছে
মস্তবড় জেলখানা
ইছে হলেই ঢুকতে পারো
কেউ করেনা মানা,
কিছুই বেশী করবার নেই
শুধু শ্লোগান কয়েকখানা
চুপটি করে ঢুকে পড়
পড়বে পিঠে দানা।

সারাদেশে চলছে এখন
রঙ্গমঞ্চে অভিনয়
কার আগে তেল কে মাখাবেন
তর তো নাহি সয়,
মিথ্যেকথার বানের তোড়ে
দেশ হল নয় ছয়
টিভিটা শুধু চালিয়ে দেখো
নষ্টামিরই জয়।

(১৯৮৬/৮৭ তে লেখা। দেশে তখন স্বৈরাচারী এরশাদের নির্বাচনী অভিসার, সাথে বিরহ কাতর লীগ। বাঘা বাঘা রাজনৈতিক গোপিনীরা রসের ধারায় গড়াগড়ি যাচ্ছেন। ষোলো পেরোই পেরোই কিশোরের সেই প্রথম অনেক দাম দিয়ে দেখা কৃষ্ণকেলী।)

স্বৈরাচারের গোয়ালঘর


স্বৈরাচারের গোয়ালঘর

অমন করে হন্যে হয়ে
কি খুজছিস হ্যারে?
আশ্রয় চাস? চলে যানা
           রাজার গোয়াল ঘরে।
তোর মত সব পেটুক গরু
           অনেক সেথায় চরে
কেউবা আবার বেশী খেয়ে
           গেছেই শেষে মরে।

গোয়াল সেতো এমন কিছু
নয়কো বিশেষ ছোটো
তাতে আবার গেল মাসে
কম পড়েছে দুটো।
মাথার পরে ঢালবি তেল
ডুবিয়ে হাতের চেটো
চাকরি তোর ঠ্যাকায় কে রে
বইবি ঝাকামুটো।

মাঝে মাঝে দিস্‌ খুলে দিস্‌
মিথ্যে কথার হাড়ি
সত্যরে তুই দিস্‌ উড়িয়ে
মেরে হাতের তুড়ি।
যখন তখন লটকে দিবি
মানুষ বাড়ি বাড়ি
তবেই না তোর আসবে হাতে
টাকা কয়েক কাড়ি।

সন্ধ্যা হলেই জাবর কেটে
দেখবি টিভির ছবি
সারাদিনে চরলি কোথায়
দেখতে পাবি সবই।
ছবিটা তোর দেখাবে যেন
সফেদ দাড়ি নবী
ছন্দবিহীন কবিতা লিখে
উপাধি নিস্‌ কবি।

(১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮’র মধ্যে লেখা। দেশে তখন স্বৈরাচারী এরশাদের কৃষ্ণকাল। নষ্টামির চুড়ান্ত। দুপুরে মসজিদে মসজিদে, রাতে টিভি আলো করে হাম্বা হাম্বা। পারিষদ এক কাঠি বাড়া – কে কার চেয়ে নষ্ট হতে পারে সেই খ্যামটা নাচের আসর আমরা বড় হতে হতে দেখলাম।)

সব শালা কবি হবে


সব শালা কবি হবে

ইচ্ছে ছিল কবিতা লিখে নাম করব খানিক
ব্যারাক থেকে উড়ে এলো কোথাকার এক বণিক
দেশটা বেচার ফাকে ফাকে পদ্য লেখায় শরিক
বাঁশটা আমার মারল লিখে ছন্দবিহীন লিরিক।

(১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮’র মধ্যে লেখা। দেশে তখন স্বৈরাচারী এরশাদের কৃষ্ণকাল। সব কিছু নষ্ট করে হাত দিল কবির সবচেয়ে অন্তর্গত বিষয়ে – কবিতায়।)

ছন্দপতন


ছন্দপতন

কোথায় গেল মোহনলাল আর কোথায় গেল মীরমদন
যে দিকে চাই দেখি এখন মীরজাফরের চাঁদবদন
দেশটা তার দেয় বিকিয়ে সুযোগ পেলেই কায়দা মতন
কি চাইলাম আর কি যে পেলাম – একেই বলে ছন্দপতন।

(১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮’র মধ্যে লেখা। দেশে তখন স্বৈরাচারী এরশাদের কৃষ্ণকাল। সবকিছুই যে বিক্রি করা সম্ভব এই লোকের আর তার সাঙ্গোপাঙ্গের পক্ষে বুঝতে শুরু করেছি সবেমাত্র)

Tuesday, March 5, 2013

রাজাকার

রাজাকার


পাকিস্তানের দশটি ছেলে দশটি রাজাকার
ট্রাইবুনালে চলছে বিচার চলছে চমৎকার

পালের গোদা গোলাম আজম ফাঁসি হয় হয়
লেজ গুটিয়ে হাসপাতালে, রইল বাকি নয়।

রায় হয়েছে সাইদী খুনি তৈরী ফাঁসিকাঠ
চাঁদে গিয়েও নিস্তার নেই থাকল মোটে আট।

আঙ্গুল তোলো যত খুশি যতই দেখাও হাত
কাদের কসাই আপিল হবে রইবে কেবল সাত।

জ্বালাও পোড়াও লাভ হবেনা আর দেখিয়ে ভয়
ঝুলতে হবেই নিযামী সাহেব আরও রইল ছয়।

ঝুলতে হবে সাকা তোমার নোংরা কথার প্যাঁচ
থাকবেনা সেও আর রবেনা বাকি হাতের পাঁচ।

পালাবে কোথায়? কার আঁচলে? বাচ্চু রাজাকার?
শেষমেষ সেই গলায় দড়ি রইল বাকি চার
আসল বলে ঘনিয়ে এলো মুজাহিদির ফাঁসির দিন
রাজাকারের নাম কাটা সব রইল আরো তিন।

চড়বে ফাঁসি সব রাজাকার তাইরে নাইরে নাই
ঝুলল এবার কামরুজ্জামান রইল জেলে দুই।

রাজাকারের কাঁপুনি দ্যাখ, দ্যাখরে তোরা দ্যাখ
আলীম খুনির গলায় দড়ি রইল বাকি এক।

একটা বাকি তৈরি ফাঁসি আলবদরের কাশেম আলি
দশটি ছেলের দশটি ঝোলে পাকিস্তানের বুকটা খালি।

আর পারিনা আর কত সয় কুত্তার ঘেউ ঘেউ
রাজাকারের বিচার হবে, রইবে না আর কেউ।

------------------------------------
মার্চ ০৪, ২০১৩