Friday, February 11, 2011

জাতকের পত্র

আমি কোন এক জন্মে মাছ ছিলাম।

আজ পুকুরে নেমেছি।

প্রখর তীব্র এক আনন্দ হল আমার।

জাতিস্মর যখন তার পূর্ব জন্ম স্মরণ করে তখনকার কথা।

স্মরণের উজ্জলতায় তার মুখে বিকেলের রৌদ্রের মত এক

মৃদু দীপ্ত আভা জন্ম নেয়।


আমি যদি জাতিস্মর হই তবে সেই আনন্দ আমার হল

পূর্বজন্মের আবাসে ফিরে এসে আনন্দ পাই।


তখনি স্মরণ করলাম।

স্মরণ করে গর্বিত হলাম -

এই দীপ্তি তোমার মুখে আমি দেখেছি অনেকবার, তীব্র

সূর্য যখন রক্তসিদুঁরের এক বিন্দু হয়ে আকাশের কপাল বেয়ে

বেয়ে বেয়ে একসময় রাজটিকার মত অন্তর্হিত

হয় – দীপ্ত দাহন হয়ে।


আমার তখন প্রশ্ন এল -

তুমিও কি তবে একজনমে আকাশ, অথবা সুর্য, অথবা

রক্তসিদুঁরের টিপ ছিলে?


আমি পূর্ব জন্মে মাছ ছিলাম।

এখন বুঝতে পারি -

আমার জলের গভীর সাম্রাজ্যে তোমার

আলোক কখনো কেন প্রবেশ করেনি।

এই জন্মে আমি মানুষের জন্ম যদি পেলাম তবে,

কেন পূর্ব জন্মের পুনরাবৃত্তি হয়? কেন হল?


আমার জন্য অনেক দুর্ভোগ তোমার হল

তোমার সর্বত্র অশান্তি দিয়েছি।

আমার সান্নিধ্যেও অশান্তি জ্ঞাপন করি ।

অনেক পাপ আমার।

এক মানবীকে অশান্তিতে ডুবিয়ে রাখি, যে আমার কাছে অন্য

কিছু চেয়েছিল।


এই পাপ ক্ষয় হয়।

প্রায়শ্চিত্ত করি।


আগামী জন্মে আমি যেন সেই প্রায়শ্চিত্তের স্বরূপ রূপে

আবির্ভূত হই শীর্ণকায় এক দৃঢ় নীলিমাস্পর্শী বৃক্ষের

শীর্ষশাখা হয়ে।


সারাটা সময় অশান্তিতে থিরথির করে কেঁপে কেঁপে উঠব, অথচ

এই হবে নিয়তি। কোন দিন এই অশান্ত কম্পন বন্ধ করে মুক্তি পাবনা।

আর, আর তপস্যা হবে তখন আমার – তোমাকে যেন

জন্মের স্মরণের হাত থেকে রক্ষা করা হয়, তুমি যেন রক্ষা পাও।

তাহলে গত জন্মের – অর্থাৎ আমাদের বর্তমান জন্মের – যে

অশান্তি তোমার জীবনে আমি বহ্নিমান করেছি, তার

বিস্মৃতি তুমি অর্জন করবে। আমারো বিস্মৃতি অর্জন করবে।


তাতে তুমি শান্তি পাবে।

তুমি শান্তি পাও।

আমার অপ্রাপ্তি নেই।

তোমার জীবনে গভীর চিহ্ন রেখেছি।

সবচেয়ে গভীর চিহ্ন।

অশান্তির চিহ্ন।

সর্বগ্রাসী, সর্বস্মরি অশান্তি।


তোমার জীবনের রন্ধ্রে মিশতে চেয়েছিলাম।

এক এবং অদ্বিতীয় হয়ে তোমাকে সম্পদ করতে চেয়েছিলাম।

মনে হয় পেরেছি।

তাই তেমন কোন অপ্রাপ্তি নেই।

তবু আরো অনেক চাওয়া আমার।


তোমার অশান্তি সেসব পবিত্র কামনা (হ্যা, দৃঢ় নিষ্কলুষ

কন্ঠে আমি সেগুলোকে পবিত্র, বিশুদ্ধ বলব) ভস্ম করে দিচ্ছে।


কষ্ট হয়।

কষ্ট কি জানি কিনা।

তুমি প্রশ্ন করতে পার।

স্বীকার করি জানিনা।


শুধু বুঝতে পারি অনুভবে – এই আমার কষ্ট যন্ত্রনা।

তোমার দৃষ্টিতে এইসব অনুভুতির কোন মূল্য নেই।

নাইবা থাকল ।

আমি আর কি করতে পারি, কত বেশী পারি।


এইসব অপ্রাপ্তি রয়ে যাবে

কি করতে পারি বল আমি নিজের চোখে অপূর্ণতা দেখা ছাড়া।

তবু তুমি শান্তি পাও।

তুমি......শান্তি......তুমি।

আমার তীব্রতম কামনা – সেই দাবাগ্নি নির্বাপিত হোক, যা আমি

অজান্তে জ্বেলেছি।

আসলে অজান্তে নয় জেনে শুনে।

তুমি আমার সবকিছুর অংশীদার হও।

অশান্তিরও।

অপ্রাপ্তি অপ্রাপ্তি থাক।

তুমি শান্তি পাও।

তারপরেও পরের বারে যখন আমি বৃক্ষের শিখরচূড়া হব,

তখন দমকা বাতাস অথবা ঝিরিঝিরি বাতাসে কেঁপে কেঁপে

আমার মনে হবে –

তুমিতো আমার কাছে সবচেয়ে বেশী চেয়েছিল

প্রচন্ড অশান্ত এক জীবন।


ভয় নেই। সব পাওয়া চাওয়া নয়। তোমার সঠিক চাওয়া গুলো

একদিন সঠিক এক বাতাসে বয়ে আমার শিখরে আঘাত

করলে আমি বুঝে যাব -

আসলে এ চাওয়া তোমার চাওয়া ছিলনা। ছিল কথার কথা।

১৯৮৯/১২/২৮

No comments:

Post a Comment